এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম বলেছেন, জুলাই বিপ্লব ছিল সর্বস্তরের নিপীড়িতের চূড়ান্ত সম্মিলিত বিক্ষুব্ধ বিস্ফোরণ। এই গণবিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছেন আমাদের শহীদরা। খোদা প্রদত্ত জানকে কোরবানি করে তারা সাম্য ও ইনসানিয়াতভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জিম্মাদারি আমাদের হাতে অর্পণ করে গেছেন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে সাদিক কায়েম আরও বলেন, এই আন্দোলন শহীদ আবু সাঈদের রক্তের ওপর দাঁড়ানো আন্দোলন, শহীদ মীর মুগ্ধের স্মৃতির ওপর দাঁড়ানো আন্দোলন। যে রিকশাওয়ালা ভাই ক্রমাগত দুঃশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে শহীদ হয়েছেন তার কোরবানির ওপর দাঁড়ানো আন্দোলন। সহস্রাধিক শহীদ আমাদের পথ দেখিয়েছেন এক নতুন মঞ্জিলে-মাকসুদ :
তিনি বলেন, এই আন্দোলনে যেমন অবদান ছিল সমাজের উঁচুতলার মানুষের, আবার আন্দোলনের ভ্যানগার্ড ছিল সমাজের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীরাও। ইংলিশ মিডিয়ামের টেক স্যাভি কিড থেকে শুরু করে কওমি-আলিয়ার তালেবে এলেম, শাহবাগ-ধানমন্ডি-মিরপুর-উত্তরা-সাভার থেকে শুরু করে বাংলার স্টালিনগ্রাদ হয়ে ওঠা যাত্রাবাড়ী, শহর-নগর, গ্রাম-গ্রামান্তরে এই বিপ্লব ছিল আপনার, আমার, সবার।
ঢাবি শিবির সভাপতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা থেকে বিপ্লবের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজে। এ আওয়াজ রুদ্ধপ্রচেষ্টা রুখে দিয়েছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ে উঠেছিল গণমানুষের কণ্ঠস্বর। এই বিপ্লব ছিল শ্রমিক, দিনমজুরের। আন্দোলন ছিল সাহসী সাংবাদিক, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসী ভাইবোনদেরও। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রবাসীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন দেশ ও জাতির মুক্তির স্লোগান তুলে।
তিনি আরও বলেন, যারা আমাদের পছন্দ করেন, অপছন্দ করেন, ঘৃণা করেন; যারা আমার সংগঠন ছাত্রশিবিরকে ভালোবাসেন, অবজ্ঞা করেন, ঘৃণা করেন- কার্যত সবার অবদানেই আমরা পেয়েছি ৩৬শে জুলাইয়ের মহাবিজয়। ফতহে মক্কা, ফতহে বাঙ্গালা, ফতহে কুসতুনতিনিয়ার সিলসিলা ধরে আমরা পেয়েছি ফতহে গণভবন- যেদিন গণভবন সত্যিই গণের ভবনে পরিণত হয়।
সাদিক কায়েম বলেন, প্রতিটা ইনসান রাস্তায় নেমে এসেছিলো, ‘আমার ভাই মরলো কেন’ সওয়ালের জবাব চাইতে। এই প্রশ্নের প্রতিউত্তরে যখন তাদের ওপর হায়েনার মত হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়েছে, তখনই আমাদের শহীদেরা দাঁড়িয়ে গেছেন লড়াইয়ের ভ্যানগার্ড হিসেবে। এই আন্দোলনের সমস্ত কৃতিত্ব আমাদের শহীদ ও হাত-পা-চোখ হারানোসহ নানাভাবে আহত ভাই-বোনের। যাদেরকে বুলেটের গুলি কিংবা জুলুম কোনকিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি। তারা একজন শহীদ হওয়ার পরে আরেকজন দাঁড়িয়ে গেছেন দু:শাসন ও স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষাকে বুকে নিয়ে।
তিনি বলেন, শত জুলুম এবং স্লো পয়জনিংয়ের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়া, জামায়াতে ইসলামীসহ দেড় যুগ ধরে তিলে তিলে ইনকিলাবের জমিন চাষ করা মজলুম সব বিরোধী দল, ইলিয়াস আলী, মাইকেল চাকমা, ব্যারিস্টার আরমান ও জেনারেল আযমি থেকে শুরু করে ফাঁসি-গুম-ক্রসফায়ারে হারিয়ে যাওয়া আমাদের সব সিপাহসালার ও সহযোদ্ধা, শাপলা-শাহবাগ দ্বন্দ্বকে পাশে রেখে শহুরে মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর সমর্থন, ভাইদের হেফাজতের ঢাল হিসেবে বোনদের বুনইয়ানুম মারসুস তথা সিসাঢালা প্রাচীর হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়া, ফ্যাসিস্টদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সর্বপ্রকার ব্ল্যাকমেইলকে উপেক্ষা করে পাহাড়-সমতলের ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের সহযোদ্ধা হয়ে ওঠা, মাদরাসার তালেবে এলেম এবং আলেম-উলামার অকাতরে জান-মালের কোরবানি এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্র সংগঠনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই ইনকিলাবের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
ঢাবি শিবির সভাপতি আরও বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ থেকে আয়নাঘর, শাপলা থেকে শুরু করে মোদীবিরোধী আন্দোলন, শেয়ারবাজারে নি:স্ব মজলুম পরিবার থেকে শুরু করে সাংবাদিক সাগর-রুনির সন্তান মেঘ- ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন ছিল জুলাই ইনকিলাবের জ্বালানি। আর শহীদরা ছিলেন সীমাহীন উজ্জ্বল স্ফুলিঙ্গ।
সাদিক কায়েম বলেন, শহীদ-গাজীর স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যারা জিন্দা আছি তাদের সামনে এক সুদীর্ঘ পথ। আমাদের শহীদদের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি সুখী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। আমরা কামিয়াব না হলে বিফল হয়ে যাবে ’৪৭, ’৭১ ও ’২৪ এর সব শহীদের রক্ত। আমাদের দৃষ্টিশক্তি হারানো ভাইদের দৃষ্টিশক্তি কোরবানি বিফলে চলে যাবে, যদি আমরা বৈষম্যহীন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তুলতে না পারি। সব শেষে তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের শহীদদের প্রত্যেককে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। তাদের রক্তের হক আদায় করে, আমাদের একটি সুখী-সমৃদ্ধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ এবং ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার তৌফিক দিন। আমিন।